সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে বান্দরবানে টানা ৩ দিনের ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কের পুল পাড়া এলাকায় সড়কে কোমর পানি উঠে যাওয়ায় বান্দরবানের সাথে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে। এদিকে কোথাও কোথাও ধসে পড়েছে ছোট বড় পাহাড়। আরো ব্যাপক হারে পাহাড় ধসের আশংকায় সর্তকতা জারি করেছে প্রশাসন। এদিকে বর্ষণ অব্যহত থাকলে বন্যার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
২ দিনের ভারী বর্ষণে বান্দরবান জেলা সদর, নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামা উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গতরা আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও পৌর সভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
বান্দরবানে প্রতিবছর কি পরিমান পাহাড় ধস হচ্ছে এর সঠিক কোন তথ্য সরকারি-বেসরকারি কোন সংস্থার কাছে না থাকলেও বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্র বলছে যেসব এলাকা পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ভৌতঅবকাঠমো তৈরি করা হচ্ছে, সে এলাকাই পাহাড় ধসের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বেশি।
বান্দরবান মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেণ্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবাধে বনাঞ্চল উজাড়ের ফলে বর্তমানে জেলার অধিকাংশ পাহাড় ন্যাড়া ভূমিতে পরিণত হয়েছে। আর ঐসব পাহাড় কেটে ভূমির ব্যবসায় নেমেছে ক্ষমতাশীন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পতভাবে বসতি গড়ে তুলছেন উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও দরিদ্ররা। পাহাড়ে বসবাসকারীরা বলেছেন অন্যত্র যাওয়ার কোন জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও বসবাস করছেন তারা।
এদিকে পাহাড় ধসে ২০০৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সদর, রোয়াংছড়ি, লামা, ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় নারী-শিশুসহ ১১৮ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৫ শতাধিকের বেশি মানুষ।
প্রতিবছর পাহাড় ধ্বসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার ঘটলেও বর্ষা আসলেই প্রশাসন কিছু বৈঠক ও মাইকিং এর মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। বান্দরবান জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ও ভাঙন কবলিত এলাকায় যাতে লোকজন বসবাস করতে না পারে সেজন্য নিয়মিত মাইকিং, এসব বিষয়ে সভায় উপস্থাপনসহ উপজেলা পর্যায়েও সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সর্বপরি জনগণকে সচেতন করার প্রচেষ্টা অব্যহত আছে।
বনাঞ্চল উজাড়, পাহাড় কাটা বন্ধ, পরিকল্পতভাবে বনায়ন ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পুনর্বাসন করা গেলে পাহাড় ধস কমে আসবে বলে ধারণা স্থানীয় সচেতন মহলের।
- ব্রেকিংবিডিনিউজ২৪ / ১০ জুন ২০১৮ / তানজিল আহমেদ